সপ্ত স্বর | বেহালা-দর্পণ ও গণিত-সঙ্গীত

সপ্ত স্বর –সঙ্গীত বিদ্যা, ঔপপত্তিক ও ক্রিয়ালিদ্ধ এই দুই অংশে বিভক্ত। ঔপপত্তিক অংশ দ্বারা সঙ্গীতের রূপ গঠিত, শৃঙ্খলিত ও অলঙ্কৃত হয়; এবং ক্রিয়াসিদ্ধ অংশ দ্বারা তাহা সাধারণের শ্রবণ সম্মুখে সুপ্রকাশিত হইয়া থাকে। সুতরাং মূর্ত্তিটাকে সৌন্দর্য্যময়ী ও সুখরী করিতে হইলে, ঔপপত্তিক স্থাস্ত্রে জ্ঞানলাভ করা একান্ত প্রয়োজন। ঔপপত্তিক অংশটী আবার পুঙ্খানুরূপে শিথিতে গেলে গণিত-বিজ্ঞানের শরণ লইতে হয়। শুর কি, প্রত্যেক সুরগুলির পরিমাণই বা কর্ত, উহাদিগের পরস্পর সম্বন্ধ কিরূপ, এক সুরের সহিত অপর শুরের শত্রু ও মিত্র ভাব অথবা কর্কশতা ও মিষ্টতার নিদান কি, এই সকল বিষয়ক জ্ঞানের নামই ঔপপত্তিক বিদ্যা। সুতরাং ইহা সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞান ও গণিত সাপেক্ষ। বিজ্ঞান রজ্জু সহযোগে গণিত দণ্ড দ্বারা মন্থিত না হইলে, কোন বিষয়েরই সত্য রূপ অমৃত লাভের আশা নাই।

অধুনা আমাদিগের দেশে যে সকল সঙ্গীত পুস্তক প্রচারিত আছে, তাহাদিগের মধ্যে এক খানিও গণিত সঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থ দেখিতে পাওয়া যায় না। অথচ সুর গুলিকে। • সীমা বিশিষ্ট করিয়া গন্তব্য স্থানের ঠিকানা করিতে হইলে, পদে পদে গণিত সঙ্গীতের প্রয়োজন। এই জন্য আমি অশেষ যত্ন ও পরিশ্রম সহকারে এই গণিত সঙ্গীত নামক ক্ষুদ্র পুস্তিকা থানি প্রণয়ন করিয়া সাধারণের হস্তে সমর্পণ করিলাম। ইহা কেবল নিদ্রা- ভঙ্গ সূচক প্রভাত সঙ্গীত স্বরূপ। হিন্দু সঙ্গীত ভিত্তিহীন বা অঙ্গুলি গণনার সামগ্রী নহে। মাঝামাঝি একটা সুর ধরিয়া লইয়া, সুক্ষ্মতম সুরাংশ শ্রুতিগুলিকে পরিত্যাগ কন্সিলে ইহা বাজীকরের গান হইয়া যায়। অতএব, জনসাধারণকে ঐ সকল সুর ও শ্রুতি নিচয়ের পূর্ণতা, প্রয়োজনীয়তা ও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অনুসন্ধানে মনোযোগী করিবার জনা, ইহা আমার কেবল প্রভাত সঙ্গীত মাত্র।

অনস্তর বক্তব্য এই যে, এই গণিত সঙ্গীত থানি আমার স্বাধীন চিন্তার সামগ্রী। নানা অসংযোগ বশতঃ এ বিষয়ে কোন পুস্তক সাহায্য বা গুরূপদেশ লাভের সুবিধা ঘটে নাই। শুতরাং ইহা যে ভ্রমপ্রমাদ শূন্য হইবে, এরূপ আশা করা যাইতে পারে না। অতএব কোন মহাজন কর্তৃক কোন অংশ সংশোধিত হইলে, তাহা আমি অবনত মস্তকে গ্রহণ করিব। . পরিশেষে কৃতজ্ঞ হৃদয়ে প্রকাশ করিতেছি যে, এই গণিত সঙ্গীত খানি প্রণয়ন বিষয়ে আমার বাল্য সুহৃদ শ্রীযুক্ত বাবু কেদারনাথ হালদার মহাশয় আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছেন। ইতি

শ্রীনবীনকৃষ্ণ শর্ম্মণঃ,

গোকনা।

সপ্ত স্বর

এই অখণ্ড মহীমণ্ডলের যে কোন প্রদেশে আপনি গমন করুন, দেখিতে পাইরেন যে, এক এক গ্রামে সা, ঋ, র, ম, প, ঘ, নি, এই সাতটা সুর ভিন্ন আর নাই। ইটালি, ইংলণ্ড, তুরস্ক, জাপান কিম্বা ভারতবর্ষ প্রভৃতি সুসভ্য দেশেই হউক, অথবা কুকি, সাঁওতাল, বেহারা, ‘বাজীকর ইত্যাদি অসভ্য সমাজেই হউক, ঐ সপ্ত স্বরের অবস্থান ও ওজন প্রায় সমভাবেই অনুষ্টিত হইয়া থাকে।

কিন্তু সপ্ত স্বরের ঐরূপ ভুবনব্যাপিনী একতার কারণ কি? তবে কি উহা ঈশ্বরের আজ্ঞ।? অথবা যে আজ্ঞায় রক্ত, পীত, নীলাদি বর্ণ পরম্পরা সর্ব্ব স্থানেই সপ্ত খণ্ডে বিভক্ত হইয়া জীব কুলের নয়নানন্দ বিধান করে, যে আজ্ঞায় রসনার তৃপ্তি সাধনে সংসারে ছয়টা মাত্র রসেরই পূর্ণাধিকার, সুরগুলিও সেই আজ্ঞায় ত্রিভূবনের সর্ব্ব স্থানেই সপ্ত খণ্ডে গ্রাম, পূর্ণ করিয়া সর্ব্ব জীবের শ্রবণ-সুখ বিতরণ করিয়া থাকে। যাহা হউক, অবশ্যই উত্তার মধ্যে কোন বৈজ্ঞানিক সত্য নিহিত রহিয়াছে। একটা প্রক্রিয়া দ্বারা সেই রহস্য বোধ হয় কথঞ্চিৎ উন্মুক্ত হইতে পারে।

একটা পর্দা বিহীন সেতারে শুদ্ধ একটা তার চড়াইয়া সম্ভবমত ওঙ্গনে বাঁধুন। নিম্নে অঙ্কিত করিয়া দেখান যাইতেছে;-

সপ্ত স্বর

 

সা এর মস্তকোপরি ক্ষুদ্র দওটা সেতারের আড়ি। তাহাতে সংলগ্ন লম্বালম্বী রেখাটা তার। তারের অপর প্রান্তে “” চিহ্নিত চতুষ্কোণটা সোয়ারি। আড়ি হইতে সোয়ারি পর্য্যন্ত এই অখণ্ড তারটার সুরকে উদারা গ্রামের সা এবং উহার ওজন অর্থাৎ এক মাত্রা কাল মধ্যে অনুকম্পন-তরঙ্গ যেন ১৬ ধরিয়া লউন। অনন্তর ঐ তারটাকে সমদ্বিখণ্ডে বিভক্ত করিয়া ঐ খণ্ডিত স্থানে এক খানি পর্দা বাঁধুন। এক্ষণে ঐ পর্দায় অঙ্গুলি গিয়া বাজাইয়া দেখুন, উহার স্থর পূর্ণ তারের অর্থাৎ উদারার সা সুরের সহিত মিশিয়া গিয়াছে। কেবল উচ্চতা ও নিম্নতা মাত্র প্রভেদ। সুতরাং, ঐ মধ্যবর্তী পর্দা হইতেই পরবর্তী গ্রাম আরম্ভ হইয়া উল্কা মুদ্রারা গ্রামের সা স্থির হইল।

 

সপ্ত স্বর

 

এক্ষণে এই মুদারা সা এর ওজন কত জানিতে হইলে নিম্নলিখিত প্রণালীতে ফল পাওয়া যাইতে পারে; যথা-

সা এই পূর্ণ তারটার ওজন যদি ১৬ হয়, তবে ঠিক তাহার অর্দ্ধ খণ্ড সা-অ 

তারটীর ওজন সুতরাং ১৬× ২ = ৩২ হইতেছে।

কেননা সমান টানযুক্ত তার ক্রমে যত ছোট হইবে তাহার অনুকম্পন তরঙ্গও সেইরূপ ক্রমে বর্দ্ধিত হইয়া পর পর উচ্চ সুর প্রসব করিতে থাকিবে। ইহা প্রাকৃতিক নিয়ম। সেই জন্য সা-অ তারটা এক মাত্রা কালে যদি ১৬ বার কম্পিত হয়, তবে তাহার অর্দ্ধ খণ্ড তার সা-অ সেই এক মাত্রা কালে সুতরাৎ ৩২ বার কম্পিত হইয়া উদারা সা এর দ্বিগুণ সুর প্রকাশ, অর্থাৎ মুদ্রারা গ্রামের পত্তন স্থির করিবে, ইহা নিশ্চয়।

এই ক্রিয়া দ্বারা উদারা গ্রামের সীমাও সুন্দররূপে নির্দিষ্ট চতল, অর্থাৎ উদারার সা হইতে মুদারার সা পর্য্যন্ত এই অর্দ্ধ খণ্ড অথবা প্রথম খণ্ড তারের মধ্যেই যে উদারা গ্রামের আর স্মার সুরগুলি নিমগ্ন’ রহিয়াছে, ইহা নিঃসন্দেহ রূপে অবধারিত হইল। এক্ষণে ঐ হরগুলি আবিষ্কার জন্য ঐ সা-অ পূর্ণ তারটাকে সমান তিন ভাগে বিভক্ত করিয়া, দ্বিতীয় ভাগের প্রারম্ভে একখানি পর্দা বাঁধুন। পরে ঐ সা-অ

পূর্ণ তারটাকে আবার সম চারি খণ্ডে বিভক্ত করিয়া তাহারও দ্বিতীয় পণ্ডের পূর্ব্ব সীমায় একখানি পর্দা বাঁধুন। অনন্তর বাজাইয়া দেখুন, ঐ দুইটা সুর অতি শ্রুতিমধুর হইয়াছে। যাহা হউক, যথাক্রমে উহাদিগের নাম রাখা হইল । নিয়ে দেখুন;-

সপ্ত স্বর

 

প্রকৃতির রমণীয় রহস্য হইতে আপনি উদারা গ্রাম মধ্যে এই দুইটী অতি পবিত্র প্রাকৃতিক শুব প্রাপ্ত হইলেন। এক্ষণে উহাদিগের কাহার কত ওজন জানিতে পারিলে পরস্পর সম্বন্ধও স্তিরীকৃত হইবে। সা-অ এই পূর্ণ তারটাকে সম তিন ভাগে বিভক্ত করিয়াই   স্থির হইযান্তে।

সুতরাং ১৬×৩=৪৮ তৃতীয় বিভাগের ওজন। কিন্তু দ্বিতীয় ভাগের শুর এসং উত্তার দৈর্ঘ্যও তৃতীয় বিভাগের ঠিক দ্বিগুণ হইতেছে; সুতরাং উহার অনুকম্পন ও ২৪ স্তিব হইল। সা-অ এই পূর্ণ তারটাকে আবার সম চারি খণ্ডে বিভক্ত করিয়া ম পাওয়া গিয়াছে। অতএব ১৬ × ৪=৬৪ চতুর্থ বিভাগের ওজন। কিন্তু দ্বিতীয় বিভাগের সুব এবং উহার দীর্ঘতাও চতুর্থ ভাগের ঠিক ত্রিগুণ হইতেছে; এই জন্য ম এর ওজন ২১*১/৬ স্থির হইল।

সপ্ত স্বর

 

উপরোক্ত প্রক্রিয়া দ্বারা মূল তারটা সম ত্রিখণ্ড ও চতুষখণ্ড দ্বারা উদার! গ্রামের পঞ্চম ও মধ্যম স্বর লভ্য হইল। অতএব এর মধ্যে আর প্রকৃত স্বরের স্থান নাই, কারণ সাড়ে তিন প্রভৃতি ভাঙ্গা ভাগ না হইলে আর উহাদিগের মধ্যে কোন প্রকারেই পর্দা বসিতে পারে না।

এক্ষণে ঐ চারিটা স্বরের পরস্পর সম্বন্ধ কিরূপ বুঝিয়া দেখুন। সা এর সহিত ন্স এর’ যে সম্বন্ধ, এর সহিত মুদারা সা এর সেই সম্বন্ধ। কেননা সা = ১৬, =সা এর দেড়া ২৪ ।’ম=২১৬, সা = ম এর দেড়া ৩২। সুতরাং, এইরূপ দেড়া সুরসূচক পঞ্চমত্ব সম্বন্ধে স্বরগুলির অবস্থানই যেন ভগবানের পূর্ণ আজ্ঞা।

অনন্তর আর আর স্বরগুলি আবিষ্কার জন্য এইরূপ যুক্তি অবলম্বন করা যাইতে পারে যে, এর পঞ্চম যদি সা হয়, তবে তাহার অব্যবহিত পরের শুর এর পঞ্চম ও সা এর অব্যবহিত পরে অবশ্যই হইবে। অতএব এর পঞ্চম স্থির করিয়া (১) সেই স্থানে ঋ বলিয়া এক গানি সারিকা বন্ধন করুন।

সপ্ত স্বর

 

তাহার ওজন সুতরাং ২৪ এর দেড়। ৩৬ হইবে। কিন্তু উঙ্গা মুদ্রারা গ্রামের ঋ। এক্ষণে ঐ ঋ-অ তারটার ঠিক সমান করিয়া উদারা সা এর দক্ষিণে এক খানি পর্দা বাঁধিলে তাহা উদারা গ্রামের হইবে এবং তাহার ওজনও সুতরাং ২*১৮ হইবে। এখন ঐ এর পঞ্চম স্থির করত সেই স্থলে এক খানি পর্দ! বাঁধিয়া তাহার নাম রাখুন।

সপ্ত স্বর

 

এক্ষণে উদারা গ্রামস্থ নি এই দুইটী সুরের অভাব রহিয়াছে। সেই হুইটী সুরের উদ্ধার হইলেই উদারা গ্রাম পূর্ণ হয়। একটু অভিনিবেশ পূর্ব্বক দেখিলে বুঝিতে পারা যায় যে,  প-অ এই তারটাকে তিন ভাগ করিলে এবং চারি ভাগ করিলে সা, পর পর এই দুইটা প্রকৃত স্বর হয়। 

————————————————————————————————————-

(১) কোন একটা পরিমিত তারকে সম তিন ভাগ করিলে দ্বিতীয় ভাগের প্রারম্ভে তাহার পঞ্চম এবং সম চারি ভাগ করিলে ঐ দ্বিতীয় ভাগের প্রারম্ভে তাহার মধ্যম হয়। 

সুতরাং ঐ -অ তারটাকে পাঁচ ভাগ করিলে অবশ্য সা এর অব্যবহিত পূর্ব্বে এক্টী প্রকৃত স্বর পাওয়া যাইতে পারে। অতএব ঐ  -অ কে পাঁচ ভাগ করিয়া দ্বিতীয় ভাগের প্রারম্ভে এক খানি পর্দা বাঁধিয়া তাহার নাম নি রাখুন। উহার ওজনও এইরূপে স্থির করা যাইতে পারে; যথা..

  প = ২৪ × ৫ = ১২০ পঞ্চম ভাগের ওজন। কিন্তু নি দ্বিতীয় বিভাগের সুর। সুতরাং উহার ওজনও এক ভাগ বাদ দিয়া ২৯০-৩০ হইতেছে।

সপ্ত স্বর

 

এক্ষণে দেখা যাইতেছে যে সা এর পঞ্চম , এর পঞ্চম , এর পঞ্চম সা, এইরূপ পঞ্চনত্ব সগন্ধে সুরগুলি শৃঙ্খলিত হইয়াছে। অতএব নি যাহার পঞ্চম হয়, এমন একটা সুর এর মধ্যে নিশ্চয়ই আছে। তাহা স্থির করিতে হইলে নি-অ তারটাকে সমদ্বিখণ্ড করুন। তাহার এক খণ্ড তারের সমান করিয়া নি এর বাম দিকে এবং এর মধ্যে এক পানি পর্দা বাঁধিয়া তাহার নাম রাখুন। গণনা দ্বারা তাহার ওজনও ২০ হইবে; এতক্ষণের পর গ্রাম পূর্ণ হইল।

পূর্ণ গ্রাম

সপ্ত স্বর

 

পূর্ব্বে কথিত হইয়াছে যে সা এর কাল্পনিক অনুকম্পন তরঙ্গ ১৬; এক্ষণে সেই ১৬র স্থলে যদি ১ ধরিয়া লওয়া যায়, তাহা হইলে’ 

সপ্ত স্বর

সপ্ত স্বর

 

এইরূপ অনুপাতে অবস্থিত : হয়। এই স্বরানুপাতের প্রতি দৃষ্টি করিলে সুরগুলি পরস্পর অতি মনোমুগ্ধর পঞ্চমত্ব সম্বন্ধে সন্নি- বেশিত হইয়াছে, ইহা পরিস্কাররূপে বুঝিতে পারা যায়; যথা-সুরের দেড়া পঞ্চম, ঋবভের দেড়া বৈবত, গান্ধারের দেড়া নিষাদ, এবং মধ্যমের দেড়া পরবর্তী গ্রামের সা।

ইহা গণনা করিয়া বুঝিয়া দেখুন। আবার সা হইতে , হইতে .. ও হইতে এর ওজনের অন্তরতা যত যত; . হইতে , হইতে নি এবং নি হইতে পরবর্তী গ্রামের সা, ইহাদিগের ওজনের অন্তরতাও ঠিক তাহার দেড়। হিসাবে পাওয়া যাইতেছে। ইহা স্বরানুপাতিক চিত্রে গণনা করিয়া দেখুন।

যাহা হউক, অতি সূক্ষ্মতম গণনাতেও সপ্ত স্বরের সন্নিবেশে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য দেখা যাইতেছে। আবার ষড়জ ও পঞ্চম তারকে ২, ৩, ৪, ৫ এই কয়টা অখণ্ড প্রাকৃতিক ভাগে বিভক্ত কবিয়াই ঋষভাদি চয়টা স্বরের সংস্তান হইয়াছে। সুতরাং স্বরগুলিও যে অখণ্ড ও প্রাকৃতিক, তাহাতে আর সন্দেহ রহিল না। (১)

——————————————————————————————————————-

১) কিন্তু আমাদিগের ধৈবতেব সহিত ইউরোপীয় ধৈবতের একটু বিশেষত্ব দেখা যায়। ভারতীয় ধৈবতের পরিমাণ ১০০ অথবা ১০৯, ইউরোপীয় ধৈযত ১৪৯১৩।–অথবা ১৫ আমাদিগের ধৈবত ঋষভের ঠিক পঞ্চম। ইউরোপীয় ধৈবুত ক্ষষভের পঞ্চম অপেক্ষা এবটু নরম। হিন্দু ধৈবত অঙ্কমুখে নির্ভুল। ইউরোপীয় ধৈবত পুর সংযোগের অনুকূল। কিন্তু ইউরোপীয় ধৈবতকে বিশুদ্ধ বলিতে গেলে গ্রামের মধ্যে সা, প, ম এবং ধ এই চারিটা শুরের প্রাধান্য স্বীকার করিতে হয়। কিন্তু, তাহা হইলে হিন্দু সঙ্গীত-শাস্ত্রের মর্ম্মে এবং উপদেশে বিষম বিপয্যয় ঘটিয়। পড়ে। আযা ঋষিদিগের মতে গ্রামের মধ্যে সা, প এবং ম এই তিনটা স্বরের প্রাধান্য অধিক। তরিয়ে ঋ এবং ধ; সর্বং শেষে গ এবং নি। প্রমাণ জন্য একটা প্রাচীন শ্লোক এই স্কুলে উদ্ধৃত করিয়। দিলাম: যথা-

পঞ্চমে। মধ্যমঃ বড়জ ইতোতে ব্রাহ্মণা: স্মৃতাঃ।

ঋষভে। ধৈবতশ্চাপি ইত্যেতো ক্ষত্রিয়া রাক্ষী।

গান্ধারশ্চ নিষাদশ্চ বৈশ্যা বন্ধেন বৈ দুঃ।

শুরুত্বং বিদ্ধি চার্চ্চেন পুতিত জ্বায় সংশয়ঃ।

ইতি নান্দ সংহি তায়া: তপা যপক্ষে ৭-দীপিকা।

এই প্রাচীন ঋষি-বাক্যের সহিত আমাদিগের গ্রাম-নিৎপণ পদ্ধতির পূর্ণ সামঞ্জস। রহিয়াছে। যাহা হউক, হিন্দু-ধৈবত্তই সর্ব প্রকারে উচ্চাসন পাইবার যোগা।

ফলতঃ, ঈশ্বরাজ্ঞা অথবা প্রাকৃতিক আধিপত্য বজায় রাখিতে গেলে, এক এক গ্রামে অখণ্ড প্রাকৃতিক সুর সা, ঋ, গ, ম, প,, ধ.. নি এই সাতটা ভিন্ন কখন আটটা কিম্বা ছয়টা হইতে পারে না। এই জন্য, প্রকৃতির মানব-জাতীর সন্তানগণ মাতৃগুণ প্রাপ্ত হইয়া সকলেই ঐ প্রাকৃতিক সপ্ত স্বরের অধিকারী। শুতরাং শুরগুলির সংখ্যা ও অনুপাত নিখিল ব্রহ্মাণ্ডময় একই ভাবে অনুষ্ঠিত হইয়া এক মাত্র ব্রহ্ম-জ্ঞানই স্বপ্রচার করিতেছে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment