তাল ও তালের বোল -বেহালা-দর্পণ ও গণিত-সঙ্গীত সূচিপত্র – অধুনা এতদ্দেশে দিন দিন জাতীয় সঙ্গীতের আদর বৃদ্ধি হইতেছে। কণ্ঠ ও যন্ত্র সঙ্গীত শিক্ষাবিধায়ক বিবিধ পুস্তক প্রণীত ও প্রচার বাহুল্যই তাহার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। স্বর-লিপির উপকারিতা বিষয়ে সাধারণের এরূপ শুভ সম্মতি নিতান্ত সুখের রিষয়।
তাল ও তালের বোল
বস্তুত, যে বিদ্যা বর্তমানে লিপিবদ্ধ হইয়া ভবিষ্যৎ জনগণের কর্ণ কুহরে মন্ত্র প্রদান না করে, সে বিদ্যার উন্নতি ও শিক্ষা-পথ অত্যন্ত জটীল ও জঞ্জালপূর্ণ। কিন্তু ধ্বংশ-পথ অতি প্রশস্ত। একটা রাজ-বিপ্লব অথবা দেশব্যাপী মহামারী সংক্রমণে তাহা অনন্ত কাল- গর্ভে বিলীন হয়। এই জন্য, লিপিগত বিদ্যার আদর দেখিলে মনে প্রকৃতই আশার সঞ্চার হয়।
তাল
সঙ্গীত ক্রিয়াকে কালরূপ দণ্ড দ্বারা মাপিবার জন্য মাত্রা কল্পিত হইয়াছে। সেই মাত্রা আবার বহুপ্রকার অখণ্ড ও সখণ্ড সংখ্যায় ছন্দোগত হইয়া তাল সৃষ্ট হইয়াছে। চারি হইতে অষ্টাদশ মাত্রা পর্য্যন্ত অনেক প্রকারের তাল ব্যবহার হইয়া থাকে; যথা- কওয়ালি, মধ্যমান, আড়া, একতালা, সোয়ারী, ঝাঁপতাল, ব্রহ্মতাল, রুদ্রতাল, চৌতাল, ইত্যাদি। কিন্তু কওয়ালি তালই আদি ও স্বভাব তাল বলিয়া বোধ হয়।
কারণ যাহারা সংসারের জটিলতা বুঝে নাই, বা বুঝিতে চায় না, ঐ সকল সরল হৃদয়ে কওয়ালি তাল, আপনা হইতে আসিয়াই উত্থিত হয়। বালকের খেলিবার ছড়া, জননীর ঘুম পাড়ানে • গান, বেহারাদিগের চলিবার বোল, মুটেদের কাটতোলা সায়েরী সমস্তই কওয়ালি তালে সম্পন্ন হয়। সেতার বেহালাদি যন্ত্রের গত অধিকাংশই কওয়ালি তালে বাজিয়া থাকে; তাহার কারণও ঐ তাল সাধারণ ও সহজবোধ্য বলিয়া। এই পুস্তকে ঐরূপ গত বাজাইবার উপযোগী গুটিকৃতক তাল, বোল সহযোগে লিখিত হইবে।
তালের বোল
চৌতাল-ছয় মাত্রা
ঠুংরি-চারি মাত্রা
ফলত গারক তালের মধ্যে যেটাতে জোর বেশী এবং যেখানে তালটা বিশ্রাম লাভ করে, তাহার নাম সম। যেটাতে সর্ব্বাপেক্ষা অল্প জোর, তাহার নাম ফাক। কওয়ালি জাতির যে চারিটা তাল, তাহার প্রথমটীর নাম বিষম, দ্বিতীয় তালের নাম সম, তৃতীয় তালের নাম অতীত ও চতুর্থ তালের নাম অনাঘাত বা ফাক। তালের চিহ্ন ১, ৩ ইত্যাদি। সমের চিহ্ন + এইরূপ এবং ফাকের চিহ্ন ০ শূন্য।
আরও পড়ুনঃ
1 thought on “তাল ও তালের বোল | বেহালা-দর্পণ ও গণিত-সঙ্গীত”