আসালঙ্কত গত – অধুনা এতদ্দেশে দিন দিন জাতীয় সঙ্গীতের আদর বৃদ্ধি হইতেছে। কণ্ঠ ও যন্ত্র সঙ্গীত শিক্ষাবিধায়ক বিবিধ পুস্তক প্রণীত ও প্রচার বাহুল্যই তাহার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। স্বর-লিপির উপকারিতা বিষয়ে সাধারণের এরূপ শুভ সম্মতি নিতান্ত সুখের রিষয়।
বস্তুত, যে বিদ্যা বর্তমানে লিপিবদ্ধ হইয়া ভবিষ্যৎ জনগণের কর্ণ কুহরে মন্ত্র প্রদান না করে, সে বিদ্যার উন্নতি ও শিক্ষা-পথ অত্যন্ত জটীল ও জঞ্জালপূর্ণ। কিন্তু ধ্বংশ-পথ অতি প্রশস্ত। একটা রাজ-বিপ্লব অথবা দেশব্যাপী মহামারী সংক্রমণে তাহা অনন্ত কাল- গর্ভে বিলীন হয়। এই জন্য, লিপিগত বিদ্যার আদর দেখিলে মনে প্রকৃতই আশার সঞ্চার হয়।
ভারতীয় সঙ্গীত-বিদ্যা-বিশারদ রাজ শ্রীযুক্ত শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর বাহাদুরের বীজ বপনে এক্ষণে সেই আশালতা সুফল প্রদান করিতেছে। পুরাতন গৎ, গান, আলাপ ও নূতন উচ্ছ্বাস সকল লিপিবদ্ধ হইয়া, সাধারণের নয়ন সম্মুখে উপনীত ও সাদরে গৃহীত হইতেছে। সুতরাং শিক্ষা-স্রোত যে একটু গতিশীল হইয়াছে, তাহা স্পষ্টই অনুভূত হয়।
বর্তমান সময়ে সুমধুর বেহালা যন্ত্রের উপর সাধারণের কিছু বেশী আশক্তি দেখা যাইতেছে; এই জন্য, যাহাতে বিনা গুরূপদেশে শুদ্ধ পুস্তক দেখিয়া ঐ যন্ত্র শিক্ষা ও তাহাতে পারদর্শিতা লাভ করা যায়, সেইরূপ উপযোগী করিয়া এই পুস্তকথানি প্রণয়ন করিয়াছি। কৃতকার্য্যতা লাভ কত দূর হইবে, তাহা শিক্ষার্থী মহাশয়দিগের বিচারাধীন। তবে, আমি এই মাত্র বলিতে পারি যে, অন্যূন পরতাল্লিস বৎসর কাল বেহালা বাজাইয়া যাহা কিছু অঙ্গুলী-গত হইয়াছে, তাহার সার-সংগ্রহে এই পুস্তকথানি সঙ্কলিত হইল।
স্বর-লিপির জটীলতা দেখিয়া কেহ যেন নিরুদ্যম হইবেন না। ক্রমে ক্রমে উঠিলে হিমাদ্রি লঙ্ঘনও সুসাধ্য হয়। স্থির বুদ্ধি, যত্ন ও সাধনা থাকিলে নিশ্চয়ই সিদ্ধি লাভ হইবে। স্বরলিপি-কৌশল, জ্যামিতি অপেক্ষা কিছু কঠিন নহে। তবে লয় ও সুর- বোধ যে দেব-দুল্লভ সামগ্রী, তাহাতে সন্দেহ মাত্র নাই; কিন্তু অভ্যাসও সামান্য জিনিষ নহে। অভ্যাস বলে নিত্য সুর নিচয় ও লয় জ্ঞান, পূর্ব্ব জন্মের স্মৃতির ন্যায় ক্রমে জাগরিত ও আয়ত্ত হইতে থাকে।
পরিশেষে পূর্ণ হৃদয়ে প্রকাশ করিতেছি যে, আমার পরম প্রিয়তম ছাত্র ধান্যকুঁড়িয়া নিবাসী শ্রীমান বাবু মহেন্দ্রনাথ গাইনের একান্ত যত্ন, উৎসাহ ও অর্থানুকূল্যে আমি পুস্তক খানি মুদ্রিত করিতে সমর্থ হইয়াছি। ভক্তিমান ছাত্র নিজে শিক্ষিত বলিয়া শিক্ষাকার্য্য প্রহ্লার জন্য গুরুর যথেষ্ট উপকার করিয়া চির-আশীর্ব্বাদের পাত্র হইয়াছেন। আরও কোন কোন মহোদয় আমাকে অথ সাহায্য করিয়াছেন, সে সকল নাম হৃদয়-ফলকে মুদ্রিত রহিল
আসালঙ্কত গত
অন্তরা।
খাম্বাজ-নি-মধ্যমান।
বিলম্বিত লয়।
খাম্বাজে দুইটা নিষাদই ব্যবহৃত হয়, এইজন্য প্রকৃত নিষাদ গুলিতে কোন চিহ্ন দেওয়া হইল না।
উপেজ।
এই গতটার প্রথম পদের শেষে প এর উপর ও সর্বশেষে গ এর উপর ছই দুইটা করিয়া মাত্রা দেওয়া আছে। ঐ ন্স কিম্বা ন্স যাহার পরই কেন উপেজ ধরুন না, উহাদের একটা মাত্রা ছাড়িয়া দিতে হইবে। সেই মাত্রাটা উপেজের প্রথম
↧———-↧
গ ম পূর্ণ হইবে। গতটা তিন চারি বার বাজাইয়া পরে উপেজ বাজাইবেন। উপেজ বাজাইবার পর পুনরায় আস্থায়ী ধরাই রীতি।
ইমন-ম-মধ্যমান।
উপেজ।
এক্ষণে পুনরায় গত ধরুন। গত বাজাইবার সময় তালের সম, ফাক ইত্যাদির হিসাবটা ঠিক রাখিবেন, অর্থাৎ গতটা কোন্ তালে ধরণ, উপেজটী বা কোন্ তালে এই সকল বিষয় একটু চিন্তার মধ্যে আনা উচিত। তাহা হইলে, তাল ও স্বর-লিপির মর্ম্ম সহজে হৃদগত হইবে।
উপেজ।
৩য়। বর মসি ধারা তরুতল বাসং।
বরমিহ ভিক্ষা বরমুপ বাসং।
বরমপি ঘোয়ে নরকে পতনং।
নচ ধনগর্বিত বান্ধব শরণং ।
১ম, ২য় ও ৩য় চিহ্নে তিনটা উপেজ দেওয়া হইল। ইহার একটা করিয়া বাজাইয়া এক এক বার গত বাজাইবেন ও পুনরায় আর একটা উপেজ ধরিবেন, ইত্যাদি।
ভীমপলশ্রী— নি—-গ— মধ্যমান।
পুরবী-ক্ষ ম ম-একতালা।
দ্রুতমাত্রা।
সতীন্দ্রনাথ (১)- নি
তেহারা মাত্রা-আড়খেপটা।
একারকে এক, ঐকারকে দুই এবং (।) দণ্ড অর্থাৎ পূর্ণ মাত্রাকে তিন মাত্রা ফল্পনা করিয়া লইবেন।
ঝিঁঝিঁট-নি-কওয়ালি।
সিন্ধু-নি গ-কওয়ালি।
খাম্বাজ-নি নি-মধ্যমান।
উপরিস্থ গতটাতে ম স ম ।। ম। এইরূপ বন্ধনী বেষ্টিত যে দুইটা পদ দেখিতেছেন, যাহা দুই বার বাজাইবার সঙ্কেত স্বরূপ দুইটী দণ্ড দ্বারা পৃথক্ হইয়াছে, উহার পূর্ব্বটীর নাম প্রথম পদ ও শেষটীর নাম দ্বিতীয় পদ। গত প্রথম বার বাজাইবার সময় প্রথম পদ এবং দ্বিতীয় বার বাজাইবার সময় দ্বিতীয় পদ বাজাইবেন। সুতরাং, প্রথম বারে দ্বিতীয় ও দ্বিতীয় বারে প্রথম পদ বাজান হইবে না। উভয় পদে অবশ্য মাত্রা সমান থাকিবে। যে যে স্থলে এইরূপ দেখিবেন, সেই সেই স্থলে ঐরূপই ব্যবস্থা।
আরও পড়ুনঃ