সাধন প্রণালী – মুদারা গ্রামের স্বরই সঙ্গীতের প্রধান আশ্রয়; এই জন্য প্রথমত মুদারা গ্রাম হইতেই স্বর সাধন আরব্ধ হইবে। কিন্তু আবশ্যক বিবেচনায় সেই সঙ্গে উদারা ও তারা গ্রামেরও দুই একটা স্বর গৃহীত হইবে। গ্রামের বিভিন্নতা, চিহ্ন দেখিয়া বুঝিয়া লইবেন। মাত্রার কাল এবং স্বরের শুদ্ধতা ও স্পষ্টতা বিষয়ে বিশেষ সতর্ক হইবেন। মাত্রা ও স্বর লইয়াই সঙ্গীত; সুতরাং ঠিক সুরে অঙ্গুলি সংযোগ ও মাত্রার স্থায়িত্ব নির্ভুল হওয়া একান্ত আবশ্যক। (১) পদের এক একটা আঘাতে এক একটা মাত্রা স্থির করিয়া লইবেন।
সাধন প্রণালী

মাত্রা ব্যবহারের নিয়ম
তিন অথবা প্লুত মাত্রা

(১) স্বরগুলি ঠিক করিবার জন্য কোন হুরজ্ঞানীর নিকট হইতে অথবা এই পুস্তকগত আঙ্গুল-পোষের চিত্র দেখিয়া কম্পাসের মাপে আপনার যন্ত্রের আঙ্গুল-পোষের উপর সাদা কাগজের টুকরা বসাইয়ালইবেন। আঙ্গুল-পোষের উপর হুন্নগুলির দুরত্ব এক প্রকার মাপ সই করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
দুই কিম্বা দীর্ঘ মাত্রা

এক বা হ্রস্ব মাত্রা

এক মাত্রায় এক স্বরের অধিক থাকিলে তাহা একটা বন্ধনীগত হইয়া থাকে। যদি সেই স্বরগুলি আবার সমসাময়িক হয়, তবে তাহাদিগের পূর্ব্ব স্বরের মস্তকেই একটা মাত্রা চিহ্ন দেওয়া হইবে; নচেৎ, যাহার যতটুকু স্থায়িত্ব, তাহার উপর সেই রূপ চিহ্ন দেখিতে পাইবেন।
অর্দ্ধ মাত্রাযুক্ত এক এক স্বর

অনু অথবা সিকি মাত্রাযুক্ত এক এক স্বর

অর্দ্ধ ও অনু মাত্রামিশ্রিত পদগুলি সহজে বুঝিবার জন্য সিকি মাত্রাগুলিকে এক মাত্রা কল্পনা করিয়া লইলে বিশেষ সুবিধা হয়।
আড়ী মাত্রা
হস্ত কিম্বা পদের আঘাতটা পড়িবার সময় সুরগুলি বাহির না হইয়া উঠিবার সময় হইলেই, তাহাকে আড়ী মাত্রা কহে, যথা-

সবিরাম মাত্রা
সুরগুলি স্রোতের ন্যার গমনশীল না হইয়া থামিয়া থামিয়া গেলেই, তাহাকে সবিরাম মাত্রা ‘কহে; যথা-

অর্দ্ধ মাত্রা ছড়ের টান অর্দ্ধ মাত্রা বিরাম। বিরাম জ্ঞাপক চিহ্ন ‘’রেফ’’। যে সুরের উপর রেফ দেওয়া হইবে, তাহাতে যে কোন মাত্রা দেখিতে পাইবেন অর্থাৎ এক, অর্থ প্রভৃতি, তাহা অর্দ্ধ বিরাম অর্দ্ধ ছড়ের টান বুঝিতে হইবে।
ত্রিখণ্ডী বা তেহারা মাত্রা
তেহারা মাত্রানুগত পদগুলি সর্ব্বথা তিন ভাগে বিভক্ত হয়। এক একটা মাত্রাও সম তিন অংশে বিভাগ করিয়া বাজান হইয়া থাকে। ১ অংশ মাত্রা ‘এ’ চিহ্নে এবং অংশ মাত্রা ‘ঐ’ চিহ্নে বুঝিতে হইবে। সহজে বুঝিবার জন্য ‘এ’ কে এক মাত্রা ও ‘এ’ কে দুই মাত্রা এবং ‘।’ এইরূপ দণ্ড-চিহ্ন অর্থাৎ পূর্ণ মাত্রাকে তিন মাত্রা কল্পনা করিয়া লইবেন। গতবিশেষে এই মাত্রা দ্রুত ও বিলম্বিত হইয়া থাকে। কিন্তু, দ্রুত বাজাইবার সময় শুদ্ধ পূর্ণ মাত্রাতেই এক একটা আঘাত করিতে হয়। ইংরাজী গতে এইরূপ ছন্দ সর্ব্বদা ব্যবহৃত হইয়া থাকে।
উদাহরণ।

আমাদিগের আড়খেমটা ও থেমটা তালও তেহারা মাত্রাহুগত।
সাধন
মুদারা গ্রাম-প্রকৃত স্বর
বিলম্বিত লয়ের সহিত পদের আঘাতে মাত্রা স্থির করিয়া ছড়ের দীর্ঘ টানের সহিত অঙ্গুলিগুলি একটু চাপিয়া বাজাইতে আরম্ভ করুন। ছড়, আগত বিগত উভয় দিকেই চালিত হইবে। ডা অর্থে আগত ও রা অর্থে বিগত টান বুঝিবেন।



অর্দ্ধ মাত্রা সাধন

অনুমাত্রা সাধন


উপরিস্থ স্বর সাধনগুলি কিছু দিন পুনঃপুন বাজাইয়া অঙ্গুলিগুলির কথঞ্চিৎ জড়তা দূর হইলে, নিম্নস্থ উদারা গ্রামের সাধনগুলি অভ্যাস করিবেন।
উদারা গ্রাম সাধন

মিশ্র গ্রাম সাধন


তারা গ্রাম সাধন
বেহালা যন্ত্রে তারা গ্রামের স্বর সাধন কিছু কঠিন। অন্য গ্রামস্থ স্বরগুলি ভালরূপ অভ্যাস করিয়া একটু সুর বোধ হইলে, তাহার পর তারা গ্রাম সাধনার সুবিধা হয়। এই গ্রামের ষড়জ ভিন্ন অন্য শুরগুলি কনিষ্ঠ অঙ্গুলি দ্বারাই বাহির হইয়া থাকে। ইহার পঞ্চম সুর পর্য্যন্ত সাধিত হইলেই এক প্রকার কার্য্য সমাধা হয়, এই জন্য পঞ্চম পৰ্য্যন্ত একটী সাধন দেওয়া হইল। রাগাদি বাজাইতে বাজাইতে আর আর শুবনিচয় ক্রমে অভ্যস্ত হইবে।

গুর্ব্বোক্ত সাধনগুলি পুনঃপুন অভ্যাস করিলে স্বর জ্ঞান, গ্রাম ও মাত্রা বোধ এবং অঙ্গুলিগুলি যথাস্থানে পতিত হইবে, এরূপ ভরসা করা যায়। যাহা হউক, এক্ষণে দুই চারিটা অসংযুক্ত স্বরের গত লিখিয়া পরে বেহালা যন্ত্রের প্রধান অলঙ্কার আসের বিষয় লিখিত হইবে। বিকৃত স্বরের সাধনগুলিও ক্রমে এই সঙ্গে দেওয়া হইবে। নচেৎ, শিক্ষার্থিগণের একটা স্বতন্ত্র মহাকাৰ্য্য পড়িয়া থাকে। বিকৃত স্বরগুলি ভাল রূপ অভ্যাস করা প্রয়োজন। কারণ, করুণ রসাত্মক ভাল ভাল রাগ রাগিণীগুলি ঐ উপাদানে গঠিত।
দুইটা স্বরের মধ্যস্থলের সুরটাকে উচ্চ সুরের কোমল অথবা নিম্ন সুরের তীব্র অর্থাৎ চড়ী সুর কহে। যেমন সা, ঋ, ইহাদের মধ্যস্থলে কোমল ঋ অথবা-চড়ী শুর। কিন্তু হিন্দু-সঙ্গীতে সুর ও পঞ্চমের কোন বিকৃতি ভাব ঘটে না, এই জন্য পূর্ব্বোক্ত উভয় স্বরের মধ্যস্থ স্বরটীকে শুদ্ধ কোমল ঋথব কহে। আবার সুর ও কোমল ঋখব ইহাদের মধ্যের শুরটাকে অতিকোমল ঋথব কহা যায়। এই নিয়মে কোমল, অতিকোমল, তীব্র, অতিতীব্র আদি সুর স্থির করিয়া লইবেন।