স্বর সম্বন্ধ – কোন স্বরের সহিত কোন্ স্বরের কত দূর নিকট বা দূরতর সম্বন্ধ, তাহা ভালরূপ অবগত হইতে না পারিলে রাগাদিকে ইচ্ছানুরূপ, নব নব বর্ণে সুরঞ্জিত করা যাইতে পারে না; অতএব, সেই বিষয়টা কথঞ্চিৎ লিখিত হইতেছে।ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের এক জাতীয় অর্থাৎ সাসা, ঋা ইত্যাদি সম্বন্ধকে স্বজাতীয় স্বর ও সম্বন্ধ কহে। গ্রামস্থ সপ্ত স্বরের মধ্যে যে স্বরের সহিত অন্য স্ববের অতি নিকট সম্বন্ধ, তাহাকে পূর্ব্ব স্বরের বাদী তদপেক্ষা একটু দূর হইলে তাহাকে সম্বাদী; ইহা হইতে আরও দূর হইলে অনুবাদী সর্ব্বাপেক্ষা দূরতায় বিবাদী স্বর ‘ও সম্বন্ধ কহে; যথা-
স্বর সম্বন্ধ
তারে আঘাত করিলে তাহা কম্পিত হয় এবং সেই কম্পনে বায়ু-সংযোগে তাহাতে তরঙ্গ উত্থিত হইয়া থাকে। এক সময়ে দুইটা হর বাদিত হইলে, সেই উভয় হরের উভয় তরঙ্গের পরস্পর সংমিলনের নৈকট্যই মিষ্টতা এবং দূরতাই কর্কশতার নিদান। নিয়ে তারা বিশদরূপে লিখিত হইতেছে।-
সা+সা জাতীয় সংযোগ।
পূর্ব্বে কথিত হইয়াছে যে, এক মাত্রা কাল মধ্যে সা এর অনুকম্পন তরঙ্গ যদি ১৬ হয়, তবে তাহার পরবর্তী গ্রামের সা এর অনুকম্পন ৩২ হইবে। সুতরাং নিম্ন শুরের প্রত্যেক তরঙ্গের সহিত উচ্চ সুরের একটা অম্ভর তরঙ্গের সংমিলন হইতেছে; যথা-
ইহাতে দুইটী অনুকূল তরঙ্গের মধ্যে একটা প্রতিকূল তরঙ্গ রহিয়াছে। স্বজাতীয় ভিন্ন ইহা অপেক্ষা নিকট মিলন ও প্রতিকূল তরঙ্গের অল্পতা অন্য কোন সুরেই হইতে পারে না। এই জন্য, দুইটা স্বজাতীয় শুর একত্র বাদিত হইলে যেন একটা শুর বলিয়া বোধ হয় ও শুনিতে অতি মিষ্ট লাগে। এখন অবশ্যই বুঝা যাইতেছে যে, ঐ উভয় সুরের যতগুলি প্রবাহ কর্ণ কুহরে প্রতিধ্বনিত হয়, তাহাদিগের মধ্যে প্রতিকূল প্রবাহের সংখ্যা অল্প, সুতরাং তাহাই মিষ্টতার কারণ।
সা+প বাদী সংযোগ।
সা এর অনুকম্পন ১৬, প এর ২৪। সুতরাং সা এর একটার স্থলে প এর . দেড় ১২ হইবে। অতএব সা এর একটার পর একটার ও প এর দুইটীর পর একটার তরঙ্গগত মিলন হইতেছে; যথা-
সংযোগে দুইটা অনুকূল তরঙ্গ মধ্যে তিনটী প্রতিকূল তরঙ্গ অবস্থিতি করে। গ্রামের মধ্যে এইরূপ তরঙ্গগত সংমিলনের ঘনিষ্ঠতা, সুর পঞ্চম সম্বন্ধ ভিন্ন অন্য কোন বিজাতীয় সুরের সহিতই সম্ভবে না। ইহাতে বিবাদী তরঙ্গের সংখ্যা, স্বজাতীয় হইতে অধিক হইলেও অন্য বিজাতীয় স্বর হইতে অনেক অল্প। এই জন্য, দুগ্ধের সহিত শর্করা মিশ্রিত হইলে তাহা যেমন একটা অপূর্ব্ব অমৃতাস্বাদে পরিণত হয়, সুর পঞ্চম সংযোগেও সেইরূপ একটা সুমধুর সুর প্রসূত হইয়া থাকে। সুতরাং পঞ্চমই গ্রামের মধ্যে বাদী সুর।
সা+ম স্যাদী সংযোগ।
এইরূপ সম্বাদী সংযোগে দুইটী অনুকূল তরঙ্গ মধ্যে এটা প্রতিকূল প্রবাহ অবস্থিতি করে। সংযোগ সুরে পঞ্চম ভিন্ন অপর বিজাতীণ স্বর নিচয় হইতে মধ্যমের বিবাদী তরঙ্গ অল্প, এই জন্য মধ্যমই গ্রামের সম্বাদী সুর।
সা+গ অনুবাদী সংযোগ।
সা এর অনুকম্পন ১৬; গ এর ২০; সুতরাং সা এর তিনটা এবং গ এর চারিটা অন্তর তরঙ্গগত মিলন হইবে।
এইরূপ অনুবাদী সংযোগে দুইটা অন্নকূর্ণ প্রবাহে সাতটা প্রতিকূল প্রবাহ অবস্থান করে। সুতরাং, এই সংযোগ-স্বর বাদী সম্বাদী ভিন্ন অপরাপর স্বর সংযোগ অপেক্ষা মিষ্ট। অতএব, গান্ধারই গ্রামের অনুবাদী সুর।
বিবাদী সংযোগ।
সা+ঝ এবং. সা+নি ও সা+ঘ; ইহাদিগকে দূরতর বা বিবাদী সংযোগ কহে।
সা+ঋ ।
সা+নি।
সা+ধ।
পাইবে। হুতরাং সা+ঝ, সা+নি এবং সা+ধ এই তিনটা সংযোগে দুই দুইটা অনুকূল তরঙ্গ মধ্যে অধিক সংখ্যক প্রতিকূল তরঙ্গের অবস্থান জন্য সেই স্বর কর্ণ- কুহরকে বিরক্ত করিয়া তুলে। এই জন্য, ঐ সকল সংযোগকে দূরতর বা বিবাদী সংযোগ কহে। ষড়জ ভিন্ন অপরাপর মুরগুলিতেও বাদী, বিবাদী, ইত্যাদি হিসাব খাটিবে।
উপরোক্ত সংযোগ ক্রিয়া দ্বারা বিভিন্ন গ্রামস্থ স্বজাতীয় স্বরের ও নিজ গ্রামস্থ অপর ছয়টা স্বরের যেরূপ নিকট ব! দূরতর সম্বন্ধ, তাহা প্রতিপন্ন হইল। এক্ষণে, নিয়ে সংক্ষেপে তাহার একটী তালিকা প্রদত্ত ছইতেছে।
যড়ঙ্গের সহিত যে যে স্ববের যত নিকটত্ব বা দূরত্ব সম্বন্ধ, তাহা উপরিস্থ অঙ্কপাত দেখিয়া অনায়াসেই উপলব্ধি হইবে। ফলত, যে স্থরগুলির সহিত ষড়জের যত নিকট সম্বন্ধ, সেই সুরগুলি তত অগ্রে মানব-কণ্ঠে ক্ষরিত হয়। একটা অশিক্ষিত বালকের কণ্ঠে অগ্রে ষড়জ, পরে পঞ্চম, তৎপরে মধ্যম ও গান্ধার, অনন্তর ঋষভ, ধৈবত ইত্যাদি সুর বাহির হইয়া থাকে।
আরও পড়ুনঃ