Site icon Violin Gurukul [ বেহালা গুরুকুল ] GOLN

সুর বন্ধন | বেহালা-দর্পণ ও গণিত-সঙ্গীত

সুর বন্ধন

সুর বন্ধন – নিয়ে আজকের আলোচনা। সুরবন্ধনটা লিখিবার সামগ্রী নহে। শ্রবণেন্দ্রিয় দ্বারা বাহাঁর স্বল্পতা ও পূর্ণতা অনুভব করিতে হয়, লিখিয়া তাহা কি প্রকারে জানাইব? তবে কর্তৃব্য বোধে উহার আনুষঙ্গিক কতকগুলি বিষয় লিখিতে বাধ্য হইলাম।

 

 

সুর বন্ধন

বেহালা যন্ত্রে যে চারিটী তত্ত্ব সংযুক্ত থাকে, ইউরোপীয়দিগের নিকট তাহা দক্ষিণ হইতে বামা গতিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তার বলিয়া কথিত হয়। কিন্তু এতদ্দেশীয়গণ প্রথমটীকে পঞ্চম অথবা জীল, দ্বিতীয়টাকে শুর, তৃতীয়টাকে মধ্যম এবং চতুর্থ টাকে নিখাদ বা সিলভর তার কহিয়া থাকেন। নিখাদটী অতিউদারা গ্রামের কোমল নিষাদ। মধ্যমটা উদারা গ্রামের মধ্যম।

সুর তারটা মুদারা গ্রামের খরজ অর্থাৎ সুর। এবং পঞ্চমটী মুদারার পঞ্চম স্বর করিয়াই সাধারণত সুর বন্ধন হইয়া থাকে। এই রূপ পঞ্চমত্ব অনুপাতে শুরগুলি বাঁধা হয় বলিয়াই বেহালার সুর স্বভাবত মিষ্ট। কোমল নিখাদের পঞ্চম, মধ্যম; মধ্যমের পঞ্চম সুর; এবং সুরের পঞ্চম জীল। উত্তমরূপে সুরটা বাঁধিয়া ছড় দ্বারা টানিলে যে কোন উভয় তারে আঘাত প্রযুক্ত সুর পঞ্চম সংযোগে সুমিষ্ট (১) পুরের ধারা বহিতে থাকে।

 

 

অতএব, যন্ত্রের সুরটা ভাল করিয়া বাঁধা কর্তব্য। নিজে সক্ষম না হইলে প্রথম প্রথম কোন সুরজ্ঞানীর নিকট হইতে ঠিক করিয়া লওয়া উচিত; এবং যত সত্বর পারা যায় ঐ ক্ষমতা আপন আয়ত্তে আনা বিশেষ প্রয়োজন। সাধারণ কথায় বলে যে, স্থর বাঁধিতে পারিলে অর্দ্ধেক শিক্ষা হইল।

বেহালার সুর নরম হইলে তত মিষ্ট হয় না এবং শব্দও বেশী হয় না। এই জন্য ইউরোপীয়গণ চড়া সুরে বাজাইয়া থাকেন। তাঁহারা মনুষ্য কণ্ঠের সাধারণ সুর (ইংরাজী D ডি সুরে) মধ্যম তারটা বাঁধেন। ইহাতে গত ও গান উভয়েরই সুবিধা হয়। এতদ্দেশীয়গণ সচরাচর কণ্ঠের ওজনে সুর তারটা বাঁধিয়া থাকেন। উহাতে তার বাঁচাইবার সুবিধা ভিন্ন অন্য কোন ফলই পাওয়া যায় না। যাহা হউক, দেশীয় রীত্যনু- সারে, অথবা তবলা তাম্বুরাদির অনুরোধে, কিম্বা বাদকের ইচ্ছামত করিয়া, অগ্রে শুর তারটা বাঁধিয়া লইবেন।

তৎপরে, অন্য তারগুলি যথামত ওজনে বাঁধিতে হইবে। অনন্তর তারার সুরে, মুদ্রারার মধ্যমে এবং উদারার কোমল নিখাদে অঙ্গুলি সংযোগ করিয়া বাজাইয়া দেখিবেন, যদি উহাদিগের স্থর তাহাদের পূর্ব্ববর্তী তারের সুরের সহিত। মিশিয়া যায়, তবে সুরটা ঠিক বাঁধা হইয়াছে জানিতে হইবে। ইহা অপেক্ষা শুর বন্ধনের কথা বিশদরূপে লিখিবার সাধ্য নাই।

এক্ষণে একটা কথা বলা নিতান্ত আবশ্যক। বাজান শেষ হইলে তারগুলি নাবাইয়া রাখা উচিত নহে। উহাতে যন্ত্রের শুর ভাল থাকে না ও বাজাইবার সময় বড় নামিয়া যায়। অতি মন্দ যন্ত্রও নিয়ত বাঁধা থাকায় ভাল সুর প্রসব করে

—————————————————————————————————————-

(১) ইহার বিবরণ গণিত সঙ্গীতের স্বর প্রকরণের বাদী সংযোগে দেখুন।

 

 

আরও পড়ুনঃ

Exit mobile version