প্রভালঙ্কার বা গিটকিরী,গমক ও মৃচ্ছ না ও বিবিধালঙ্কত গত – এই অলঙ্কারটা আসের অন্তর্গত হইলেও ইহাতে একটু বিশেষত্ব আছে। ইহা সঙ্গীতের অতি উজ্জ্বলতম রত্ন। কণ্ঠে কিম্বা বেহালাদি যন্ত্রে ইহা যথারীতি প্রদত্ত হইলে, সঙ্গীত অতি মধুরতায় পরিণত হয়। “সোরির” টপ্পা শুদ্ধ এই অলঙ্কারেই ভূষিত; এই জন্য শ্রবণমাত্রেই উহাতে সাধারণের মন মুগ্ধ হয়।
নেহারার গতগুলি যে গুনিতে মিষ্ট লাগে, তাহারও কারণ ঐ। আবার আলাপাদির সময় এই অলঙ্কারটা উপযুক্ত স্থানে পরাইতে না পারিলে মূর্তিটা মনোমোহিণী সাজে সজ্জিত হয় না। এই জন্য প্রভালঙ্কারটী উত্তম রূপে অঙ্গুলিগত করা কর্তব্য।
ছড়ের একটানে এবং এক মাত্রা কালে অব্যবহিত পর পর গুটীকতক স্বয় সংযোগে একটা ছন্দ হইলে, তাহাকে প্রভালঙ্কার বা গিট কিরী কহে। মাত্রা যদি দ্রুত হয়, তবে উহা দুই মাত্রায়ও সম্পন্ন হইয়া থাকে। প্রভালঙ্কায় সাধারণতঃ একই প্রকার, কিন্তু দুই একটা স্বরের সংযোগ বিয়োগে তাহা আবার বিবিধ বর্ণে প্রকাশিত হয়।
তাহার মধ্যে সরল ও মিশ্র নামে যে দুইটী অধিকাংশ স্থলে প্রয়োগ হয়, সেই উভয় জাতীয় গুটীকতক সাধন নিয়ে প্রদর্শিত হইতেছে। সাধনগুলি এক মাত্রানুগত করিলে প্রথম শিক্ষার্থীদিগের পক্ষে কঠিন হইবে বিবেচনায় দুই মাত্রায় পুরণ করা হইল।
প্রভালঙ্কার বা গিটকিরী,গমক ও মৃচ্ছ না ও বিবিধালঙ্কত গত
প্রভালঙ্কার সাধন।
উপরিস্থ দ্বিমাত্রাস্থগত সরল ও মিশ্র সাধনগুলি উত্তম রূপে অভ্যাস করিয়া শেষে ঐ সাধনগুলিকে একমাত্রানুগত করিয়া বাজাইবেন। ঔদাস্য করিয়া একটাও পরিত্যাগ করিবেন না। এই অলঙ্কারই বেহালায় মিষ্টতা সম্পাদনেয় অদ্বিতীয় সহায়। সাধনগুলি শুদ্ধ প্রকৃত স্বরে দেওয়া হইয়াছে; শিক্ষার্থিগণ ঐ গুলিকে বিবিধ বিস্তৃত স্বরে ও গ্রামান্তরে পরিণত করিয়াও অভ্যাস করিবেন।
অঙ্গুলীর ঠোকরগুলি যাহাতে সজোরে পতিত ও নিয়মিত হয়, সে বিষয়ে যত্নশীল হইবেন। কিছুদিন সাধন করিতে করিতে যখন দেখিবেন অঙ্গুলিগুলির মস্তকে বিলক্ষণ জোর দাঁড়াইয়াছে, তখনই বুঝিবেন অনেকটা সিদ্ধিলাভ হইয়াছে। যাহা হউক, ইহার পরে যে সমস্ত গত দেওয়া হইয়াছে, তাহাও এই সঙ্গে অভ্যাস করিবেন।
নেহারাদি ভাল ভাল গতগুলি, আস, প্রভা, গমক, মৃচ্ছ ণা প্রভৃতি বিবিধ অলঙ্কারে ভূষিত; এই জন্য, গমক এবং মুচ্ছ ণালঙ্কার দুইটাও এই স্থলে লিখিত হইতেছে।
গমক।
সুর কম্পনের নাম গমক। কোন একটা শুরে অঙ্গুলীপাত করত অতি দ্রুততার সহিত ঘর্ষণ যোগে সেই সুরকে কম্পিত করার নাম গমক। উহার চিহ্ন এই রূপ গজ-কুস্তাক্বতি।
সাধন।
মূর্চ্ছণা । (১)
কোন একটা সুর স্রোতের ন্যায় অবিচ্ছেদ গতিতে তদপেক্ষা উচ্চ অথবা নিম্ন সূরে গিয়া মিশ্রিত হইবার নাম “মূর্চ্ছণা “। সুতরাং মূর্চ্ছণা দ্বারা বিভিন্ন স্বরের পরস্পর সংযোগ কাৰ্য্য সাধিত হইয়া সেই সুর স্থুর স্থুললিত গম্ভীরতায় পরিণত হয়। সুনিপুণ চিত্রকর হস্তে বিভিন্ন বর্ণদ্বয় যেরূপ শেড্ সংযোগে মিলিত হয়, মৃচ্ছণা দ্বারাও সুর-সম্মিলন তদ্রূপ হইয়া থাকে। এই জন্য রাগাদি বাজাইবার সময় মূর্চ্ছণালঙ্কারের বিশেষ প্রয়োজন হয়। হিন্দু- সঙ্গীতে এই মূর্চ্ছণাই, সর্বপ্রধান অলঙ্কার এবং ইহা বাজাইতেও একটু স্বর-জ্ঞানের আবশ্যক। মূর্চ্ছণা র চিহ্ন। ~~~~এইরূপ শৃঙ্খলের ন্যায়। যে যে স্বরের নিম্নে উহা প্রযুক্ত হইবে, তাহা মূর্চ্ছণাগত বুঝিতে হইবে।
দৃষ্টান্ত।
উপরিস্থ দুইটা ছন্দের প্রথম নি ও গ গ্রহস্বর। উহার স্বর বাহির হইবে না; অতি দ্রুততার সহিত উহাদের অব্যবহিত স্বর ‘’ সা’’ ও ‘’ম’’ তে সুর মিশ্রিত হইয়া সেই একই টানে মাত্রানুযায়ী পর পর সুরগুলি একটি অঙ্গুলীর বর্ষণে বাহির হইবে। এক্ষণে এই কথাটি স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, মৃচ্ছণা বাজাইবার সময় সুর- গুলির ধারণায় যদি সন্দেহ থাকে, তবে অগ্রে তাহা আসে বাজাইয়া সুর বুঝিয়া লইবেন, তাহার পর মৃচ্ছণায় আনিতে অনেক সুগম হইবে। সুরের নিয়ে ১, ২, ৩ ইত্যাদি অঙ্কপাত থাকিলে যথাক্রমে তর্জণী, মধ্যমাদি অঙ্গুলী বুঝিতে হইবে।
মূর্চ্ছণা – সাধন।
মূর্চ্ছণা বাজাইবার সময় অঙ্গুলী নির্দেশের সাধারণ সঙ্কেত এই যে, মুচ্ছণার অন্তর্গত যে সুরটা সকলের নিম্ন, সেই সুরের অঙ্গুলীই ব্যবহার্য্য।
এই পঞ্চম সাধনটা, প্রথম আসে এবং পরে মূর্চ্ছণায় যেরূপ দেখান হইয়াছে, আর আর সাধন, গত ও আলাপের মূর্ছণাও ঐ রূপে অভ্যাস করিবেন।
ঝিঁঝিঁটি – নি-মধ্যমান।
হাম্বির-ম-মধ্যমান।
ঊপেজ।
ছায়ানট-ম ম-মধ্যমান।
কেদারা-ম ম-মধ্যমান।
কালাংড়া-নি ক্ষ ম ম-মধ্যমান।
মিশ্র যোগিয়া-ঋ ধ-পঞ্চম সোয়ারী।
ভৈরবী – ঋ গ ধ নি -মধ্যমান।
কানাড়া – নি গ ধ – মধ্যমান।
মুলতানী – ঋ গ ধ ম – মধ্যমান।
বিলম্বিত মাত্রা।
নিম্নস্থ দুইটা গত মধ্যম ঠাটে অর্থাৎ উদারার মধ্যম তারকে মুদারা স্থুর কল্পনা করিয়া বাজাইবেন, তাহা হইলে ম=সা, প = ঝ, ধ-গ, নি=ম যথাক্রমে ঐ রূপে সপ্তক স্থির করিয়া লইবেন।
আলেয়া-মধ্যমান।
সিন্ধুড়া – নি গ -ঢিমেতেতালা।
লগ্নী – নি – মধ্যমান, দ্রুতমাত্রা।
নিতান্ত সাধারণ হইলেও ছাত্রদিগের অনুরোধে এই গতটা প্রদত্ত হইল।
নিম্নের তিনটা গত রাজ শ্রীযুক্ত সৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর বাহাদুরের সঙ্গীত-সমাজ হইতে, গুরুদেব ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী মহাশয়ের দ্বারা প্রস্তুত। যদিও এই গত অনেকেই অবগত আছেন, তথাপি উহার মিষ্টতার পক্ষপাতী হইয়া এই পুস্তক সন্নিবিষ্ট করিলাম।
আড়ানা বাহার – নি গ -পঞ্চমসোয়ারি।
কেদারা – ম ম-মধ্যমান।
ঝিঁঝিঁট – নি – মধ্যমান।
আরও পড়ুনঃ