গত প্রকরণ , অনলঙ্কত গত ও আসালঙ্কার | বেহালা-দর্পণ ও গণিত-সঙ্গীত

গত প্রকরণ , অনলঙ্কত গত ও আসালঙ্কার – দুই, তিন বা ততোধিক বর্ণ একত্র হইলে যেমন একটী পদ হয়, সেই রূপ দুই তিন বা ততোধিক স্বর সংযোগে এক একটা ছন্দ হইয়া থাকে। ঐ রূপ গুটীকতক ছন্দ, কোন তালানুগত মাত্রায় সংযুক্ত হইলে তাহাকে পদ কহে। মন মুগ্ধকর স্বর . সংযোগে ঐ রূপ দুই চারিটা পদে কোন রাগাদির মুর্ত্তি প্রকাশ করার নাম গত। গতের যে পদটা প্রথমে ধরা যায়, তাহাকে আস্থায়ী এবং পরে যে উচ্চ সুরের পদটা বাদিত হয়, তাহাকে অন্তরা কহে।

অনন্তর খাদ সুরের ও অন্তরার ন্যায় উচ্চপুরের যে শেষ দুইটী পদ, তাহাকে যথাক্রমে সঞ্চারী ও আভোগ কহে। কিন্তু, গান ও আলাপ ভিঙ্গ, গতে সৈরূপ পদ বড় ব্যবহার নাই। গত বাজাইবার সময় উপেজ অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদ দ্বারা তাহাকে শোভিত করিতে পারিলে অতি মিষ্ট গুনায় এবং গতও বিস্তৃত হয়। ঐ রূপ উপেজ বাজাইয়া, পরে আস্থায়ী ধরাই রীতি।

গত প্রকরণ

পদের শেষে (। ) এই রূপ দণ্ড চিহ্ন থাকিলে পদ বা ওরাদার শেষ বুঝিতে হইবে। যে পদের অন্তে এই রূপ (।।) দুইটা দণ্ড থাকিবে, তাহা দুই বার বাজাইতে হইবে। যদি একাধিক পদ হইতে বাজাইতে হয়, তবে যে স্থান হইতে বাজাইতে হইবে, সেই স্বরের মস্তকে ও ঐ দুইটা দণ্ডের মস্তকে সমান অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত হইবে।

দ সম্পূর্ণ জ্ঞাপন চিহ্ন:: এইরূপ। যে তারে যে স্বর আছে, যদি তাহার বাম পার্শ্বের তারে সেই শুর বাহির করিতে হয়, তবে তাহার মস্তকে ⊡ এই রূপ একটা চতুষ্কোণ চিহ্ন প্রদত্ত হইবে। বিকৃত স্বরদিগের মধ্যে যদি কোন সময় প্রকৃত স্বর বাজাইবার আবশ্যক হয়, তবে সেই স্বরের মস্তকে ⊕ এই রূপ চক্র চিহ্ন ব্যবহৃত হইবে। গ্রাম ও স্বরের কোমলকড়ী আদি চিহ্ন যথাস্থানে দেখিয়া লইবেন।

গত।

আলেয়া-মধ্যমান।

 

আলেয়া-মধ্যমান

আলেয়া-মধ্যমান

 

বেহাগ-মধ্যমান-দ্রুতমাত্রা।

 

বেহাগ-মধ্যমান-দ্রুতমাত্রা

বেহাগ-মধ্যমান-দ্রুতমাত্রা

 

খাম্বাজে প্রকৃত ও কোমল দুইটা নিষাদই ব্যবহার হয়। প্রকৃত নিষাদ গুলি চক্র চিহ্ন দ্বারা পৃথক করা হইয়াছে। যাহা হউক কোমল স্বরগুলি অঙ্গুলিগত করিতে বিশেষ যত্নবান হইবেন।

 

বেহাগ-মধ্যমান-দ্রুতমাত্রা

বেহাগ-মধ্যমান-দ্রুতমাত্রা

 

ইমন। ম (১)

ঢিমে-তেতালা।

 

ঢিমে-তেতালা

 

(১) সুধারা আমের কড়ি মধ্যম কনিষ্ঠ অঙ্গুলী যায়। খাজাইবেন। কিন্তু যুচ্ছ না বাজাইবার সমপ্ত অনামিকা অঙ্গুলী দ্বারাই হুবিধা।

 

ঢিমে-তেতালা

 

গতের কোমল সুরগুলির প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখিবেন। নচেৎ গত কখনই মিষ্ট হইবে না। ঠিক কোমল সুরে অঙ্গুলি পাত করিতে অবশ্য একটু কসলৎ আবশ্যক হইবে।

 

ঢিমে-তেতালা

ঢিমে-তেতালা

ঢিমে-তেতালা

ঢিমে-তেতালা

 

অলঙ্কার।

ছড়ের এক এক টানে এক একটা সুর বাজিলে গত কিম্বা আলাপাদি শুনিতে তত মিষ্ট হয় না। এই জন্য শুর পরম্পরাকে আস, গিটকিরি, গমক ও মুচ্ছ ‘নাদি বিবিধ অলঙ্কারে ভূষিত করিয়া বাজাইতে হয়। ক্রমে ঐ সকল অলঙ্কারের বিষয় লিখিত হইতেছে।

আস।

এক টানে একাধিক শুর বাহির হইলে তাহাকে আসালঙ্কার কহে। বেহালা যন্ত্রের অত্যুৎকৃষ্ট অলঙ্কার যে গিটকিরি, তাহা এই আসেরই অন্তর্গত। ফলত এক আসই যদি সুন্দর রূপে বাজান যায়, তাহা হইলে মুচ্ছ ‘নাদি অন্য অলঙ্কার না হইলেওঁ বেহালায় মিষ্টতা সম্পাদনের বিশেষ ব্যাঘাত ঘটে না। কিন্তু উহা বাদ দিলে এই যন্ত্র একেবারে প্রাণশূন্য হইয়া পড়ে। এই জন্য আসালঙ্কারটা বিশেষ যত্নের সহিত অভ্যাস করা কর্তব্য।

এক টানে যে কয়টা শুর বাহির হইবে, নিম্নদেশে একটা রেখা দ্বারা সেই স্বরগুলি আবদ্ধ থাকিবে। সুতরাং পূর্ব্বস্বরে টান আরম্ভ করিয়া শেষ সুরে আসিয়া বন্ধ করিতে হইবে। পুনশ্চ এক্ষণ হইতে অঙ্গুরিগুলি একটু ভাল করিয়া চাপিয়া বাজাইবেন। অবশ্য, বেদনা না হয় এতদূর পর্য্যন্ত।

আসসাধন।

 

আসসাধন।

নি

আসসাধন।

আসসাধন।

 

 

আসসাধন।

আসসাধন।

 

নি

হ্রস্বমাত্রা।

 

গত প্রকরণ

 

উপরিস্থ বিকৃত স্বরের সাধনগুলি অভ্যস্ত হইতে কিছুকাল বিলম্ব হইতে পারে। কিন্তু তাহ। বলিয়া ব্যস্ত হইবেন না। একমাত্র কসলৎই সঙ্গীতের জননী। যে বিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করিলে সমাজ মধ্যে যথেষ্ট আদর ও সম্মান পাওয়া যায়, তাহা অনায়াসে উপার্জিত হইবার নহে।

তবে যত্ন, পরিশ্রম ও একাগ্রতা থাকিলে ইহাতে যে সফলকাম হইতে পারিবেন, ইহা নিশ্চয় বলা যাইতে পারে। যাহা হউক, সাধনগুলি – নিয়ত না বাজাইয়া ঐ সঙ্গে সঙ্গে গতগুলিও অভ্যাস করিবেন। ফলত, অঙ্গুলি-নিচয় যাহাতে ঠিক নির্দিষ্ট সুরে পতিত হয়, সেই রূপ কসলৎই প্রয়োজনীয়। 

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment